রায়গঞ্জ: স্বাধীনতা সংগ্রামীর গ্রাম। যোদ্ধার স্মৃতিচারণায় মুখর এই গ্রামে এখন মন্দির ঘিরে জনপদ গড়ে উঠেছে। এক ফালি ভূখণ্ডের মধ্যে ইতিহাসের অমোঘ হাতছানি। হাত বাড়ালেই সবুজ বনভূমির মোহময় অনুভূতি। অদূরে বয়ে যাচ্ছে মহানন্দা। তার মাঝে প্রায় শতাব্দি ধরে জেগে আছে শিবলিঙ্গ। হালফিলে সেই মন্দিরকে হেরিটেজ হিসেবে তকমা দিয়েছে রাজ্য সরকার। রায়গঞ্জের অদূরে ঐতিহাসিক এই গ্রামের নাম মারনাই। অন্য আর পাঁচটা গ্রামের মতো এই গ্রামের প্রকৃতির শোভা মনে শান্তির এনে দেয়। অতি সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের বাস এই গ্রামে। তবে এই গ্রামটি কিন্তু সাধারণ না। ইতিহাসের পাতায় ধূলোমাখা স্মৃতি হিসেবে এখনও আছে এই গ্রামের নাম। একদিকে এই গ্রামে রয়েছে বাংলার পাল চৌধুরী বংশের শতাব্দী প্রাচীন জমিদারবাড়ি। অন্যদিকে, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৪৬-এর তেভাগা আন্দোলনেও জড়িয়ে আছে এই গ্রামের নাম। হেলায় প্রায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এই গ্রামের সমস্ত ঐতিহাসিক উপাদানগুলি।
এই মারনাই গ্রামের মাঝেই রয়েছে শতাব্দী প্রাচীন পাল চৌধুরী জমিদারবাড়ি। সঙ্গে রয়েছে শতাব্দী প্রাচীন দুটি শিবমন্দির। গ্রামবাসীদের দাবি, একটি শিবমন্দির সরকারের তরফে সংস্কার করা হয়েছে। তবে অন্যটি এখনও বাকি। গ্রামের প্রাণভ্রোমরা এই দুটি শিবমন্দিরকে হেরিটেজ তকমা দিয়ে রাজ্য পর্যটন মানচিত্রে দেখতে চায় এই গ্রামের মানুষেরা। যদিও একটিকে হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। শুধু শিবমন্দির নয় এই গ্রামে থাকা প্রাচীন প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিও নষ্ট হচ্ছে। তাই অসুস্থ হলেই গ্রামের মানুষকে দৌড়তে হয় ইটাহার ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। এই ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রও তৈরি করেছিলেন ইটাহার বিধানসভার প্রথম বিধায়ক বসন্তলাল চট্টোপাধ্যায়। এখন তামাম ইটাহারবাসীর আকর্ষণ বিন্দু মারনাই গ্রাম। স্বাধীন ভারতের প্রথম বিধায়ক ইটাহার বিধানসভার বসন্তলাল চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি ওই মারনাই গ্রামে। তিনি তেভাগা আন্দোলনের ‘আগুন’ জ্বালিয়েছিলেন ওই নিরিবিলি আস্থানায়।
রায়গঞ্জ থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে মারনাই গ্ৰামে গিয়ে দেখা গেল, গ্ৰামের খুদেরাও ছোট ছোট শিবলিঙ্গ তৈরি করতে ব্যস্ত। গ্ৰামের ছোট ছোট ছেলে মেয়েরাও দিনভর উপাস করেছে। সন্ধ্যায় শিবের মাথায় জল দেওয়ার পর ফল গ্রহণ করবে। মন্দির প্রাঙ্গণে রাতভর বাউল গানের প্রস্তুতি পর্ব শুরু হয়ে গিয়েছে। ভিন জেলা থেকে এসে গিয়েছে বাউলের দল। এই মন্দিরে হিন্দুর পাশাপাশি মুসলিমরাও চাঁদা দেয়।