- মণিজিঞ্জির সান্যাল
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি পোস্ট করা এখন রীতিমতো এক নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে বুঝে না বুঝে আবেগের বশে অনেক স্পর্শকাতর ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে থাকেন। অনেকেই নিরন্তর নিজেদের ছবি পোস্ট করেন। বাইরে ঘুরতে যাওয়া থেকে শুরু করে নিজের সন্তানের ধীরে ধীরে বড় হয়ে ওঠা- ছবির পর ছবি, বাদ যায় না কিছুই। জানেন কি, আপনারই পোস্ট করা বেশ কিছু ছবি অনায়াসে চলে যেতে পারে সাইবার হানাদারদের দখলে? পরে সেগুলোই ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ে নানা সাইটে।
আসলে কিছু অনুভূতি, কিছু ভালো লাগা নিজের কাছে রাখাটাই শোভন। নইলে ব্যক্তিগত বলে আর কিছুই থাকে না। পারিবারিক মুহূর্তগুলোকে অনেকেই বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে দ্বিধা করেন না। নিজেদের জীবনকে বাইরের জগতে তুলে ধরায় কী এমন কৃতিত্ব আছে?
সোশ্যাল মিডিয়ায় বাচ্চাকে নেশাগ্রস্ত করার পেছনে কিছু বাবা-মা’ও কম দায়ী নন।
একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে কিছু অভিভাবক শিশুর জন্মলগ্ন থেকে স্নান, খাওয়া, ঘুম, হাসি, কান্না সবকিছুই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিচ্ছেন। একবারও চিন্তা করে দেখেছেন একটু বড় হলেই এইসব দৃশ্য বাচ্চাটির মনের মধ্যে কতখানি প্রভাব ফেলতে পারে।
এই যে বাচ্চারা যা খুশি নাচছে, গান করছে সঙ্গে সঙ্গে তার সেই ভিডিও অভিভাবকরা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিচ্ছেন। সস্তায় এই যে প্রচার ধীরে ধীরে বাচ্চাটিকে এই ভার্চুয়াল জগতের প্রতি নেশায় পরিণত করছে। জীবনের আসল রূপ, আমাদের চারপাশের গাছপালা, মাটি, জল, প্রকৃতি, বাতাস ইত্যাদির বাস্তব রূপ থেকে সে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে একটা স্মার্টফোনকেই বন্ধু হিসেবে বেছে নিচ্ছে।
ছোটবেলা থেকেই শিশুদের এসব সোশ্যাল মিডিয়া বা ফেসবুকে নানাভাবে জনপ্রিয়তা বা তথাকথিত তারকার খেতাব পাওয়া বাচ্চাদের মনোজগৎকেও প্রভাবিত করে। ভার্চুয়াল জগতে অনেকের মনোযোগ বাচ্চাকে নিজের সম্পর্কে একধরনের ভ্রান্ত ধারণা এবং ক্ষেত্রবিশেষে তাকে বাস্তব জগতের বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন করে তোলে। অন্যের চোখে গ্রহণযোগ্য হওয়ার মানসিকতা এ ক্ষেত্রে অনেক সময় বাচ্চাদের নিজের মতো করে বড় হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ভার্চুয়াল জগতে তার যে গ্রহণযোগ্যতা, সেটাই অবচেতনভাবে চারপাশ থেকে প্রত্যাশা করার মানসিকতা তার মধ্যে তৈরি হয়।
প্রথমত, ছোট বাচ্চাদের একান্ত ব্যক্তিগত ছবি, আদর করার দৃশ্য বন্ধুদের দেখাতে হলে পাবলিক না করে ক্লোজ গ্রুপে দেওয়া ভালো।
দ্বিতীয়ত, শিশু যত ছোটই হোক, শরীরের কিছু অংশ যদি উন্মুক্ত থাকে এমন ছবি প্রকাশ না করা ভালো। অনেকেই জানেন না, এসব ছবি নিয়ে শিশুদের ওপর পর্নোগ্রাফি ফিল্ম তৈরি করে সাইবার অপরাধীরা।
তৃতীয়ত, অন্যের শিশুর ছবি পোস্ট করার আগে তাদের মা–বাবার অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন। চতুর্থত, সন্তান একটু বড় হলে তার ছবি, ভিডিও বা তার গল্প প্রকাশ করার আগে সন্তানের অনুমতি নেওয়া উচিত।
আপনার সন্তানকে পার্কে বা খেলার মাঠে নিয়ে যান। ছুটির দিনে ইন্ডোর গেমস খেলুন। আপনি নিজে সতর্ক থাকুন। আর সন্তানদেরও স্বনির্ভর হতে দিন।
(লেখক সাহিত্যিক। শিলিগুড়ির বাসিন্দা)