- আশিস ঘোষ
বেঘোরে প্রাণ গেল মহম্মদ আফসানের। হায়দরাবাদ থেকে রাশিয়া গিয়েছিলেন সেনাবাহিনীতে হেল্পার হয়ে চাকরি করতে। অথচ তাঁকে পাঠানো হয়েছিল ইউক্রেনে রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করতে। অন্য দেশের হয়ে লড়াই করতে গিয়ে মারা গিয়েছেন তিনি। শুধু একা আফসান নন, তাঁর মতো আরও জনা বিশেক তরুণকে চাকরি আর ভালো মাইনের টোপ দিয়ে রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে অন্যের হয়ে অন্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে।
মাসে সওয়া লাখ টাকা হাতে পাওয়ার আশায় এজেন্টের হাতে কড়কড়ে লাখ দেড়েক টাকা দিয়ে ইজরায়েলে গিয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশ আর হরিয়ানার তরুণরা। দুই রাজ্যের সরকারই বড় বড় করে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল সেখানে দক্ষ শ্রমিকদের দশ হাজার চাকরির। তারপর নানারকম পরীক্ষার পর ঝাড়াইবাছাই হয়ে কাজের খোঁজে ইজরায়েলে গিয়েছিলেন অনেকে। তাঁদেরই একজন লেবানন থেকে ছোড়া হিজবুল্লার গোলায় প্রাণ হারিয়েছেন, জখম আরও দুজন। তাঁরা কাজ করছিলেন সেখানকার মার্গালিয়েট গ্রামের ফলের বাগানে।
যুদ্ধের জন্য ফিলিস্তিনি শ্রমিকের আকাল পড়েছে। তাই গন্ডায় গন্ডায় দল বেঁধে তেল আভিভে রওনা হচ্ছেন এদেশের নওজোয়ানরা। সেখানে ছুতোর, কামার, চাষি, বাড়ি বানানোর রাজমিস্ত্রি চাই। এদেশে কাজ নেই। তাই কাতারে কাতারে তরুণরা ভিড় করছেন কর্মসংস্থান কেন্দ্রে। কাজ দাবি। ইজরায়েলে ভারতীয়রা মারা গিয়েছেন শুনেও পিছপা নন তাঁরা। তাঁদের একটাই কথা, এখানে না খেয়ে মরার থেকে বিদেশে কাজ করতে গিয়ে মরাও ভালো।
অমৃতকালে বিদেশবিভুঁইয়ে এমন অসহায় মৃত্যু মোটেই দেশের পক্ষে, দেশের সরকারের পক্ষে, শাসকদলের পক্ষে ভালো বিজ্ঞাপন হতে পারে না। কাজ নেই। কাজ চাই। এই ভোটের মরশুমে সে দাবি জোরে উঠছে কই? একটা দেশের যুবসমাজ নানা নামের খয়রাতি নিয়ে বেঁচে থাকবে কেন? কখনও রাম মন্দির তো কখনও পরিবারতন্ত্রের কথা বলে, ৩৭০ ধারা বিলোপ কিংবা নানারকম পরিসংখ্যান দিয়ে অগ্রগতির ঢাক পিটিয়ে সেই আওয়াজে ডুবিয়ে দেওয়া হচ্ছে তরুণদের অসহায় বিদেশ যাত্রার কথা। গলা ফাটিয়ে বলা হচ্ছে মোদির গ্যারান্টির কথা, কথা দিয়ে কথা রাখার কথা।
বেকারদের কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতির কী হল? বছরে ২ লাখ চাকরি গেল কোথায়? ঘটা করে রোজগারমেলা করে ক’জনের মুখে হাসি ফোটানো গেল দশ বছরে? কে বলছে? কাদের সভায়, বক্তৃতায় উঠে আসছে তাঁদের দাবির কথা? কংগ্রেস এবার বেকারির কথা খানিকটা অন্যভাবে বলছে। তারা বলছে, ‘ভর্তি ভরোসা’র কথা। বিভিন্ন দপ্তরে যে ১৫ লাখ শূন্যপদ রয়েছে তা পূরণ করার কথা বলছে তারা। তাদের প্রতিশ্রুতি ৩০ লাখ শূন্যপদে চাকরিতে নিয়োগ। এই সংখ্যাটা বরং তুলনায় ভরসার। চাইলে করে ফেলা যেতে পারে। কেন্দ্রীয় সরকারি অফিসে খালি পদের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। অঙ্গনওয়াড়ি, আশাকর্মী, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে আরও ৩ লাখের কর্মসংস্থান হতে পারে। গত কয়েক বছরে কর্মসংকোচনে কমে যাওয়া আরও লাখ দুয়েক চাকরি যোগ করলে চলতি কাঠামোতেই ১৫ লাখ চাকরি হতে পারে। কংগ্রেসের হিসেব এমনটাই। তারা বলছে, শিক্ষিত বেকাররা এটাই চাইছেন। বছরে ২ কোটি চাকরির অলীক জুমলার বদলে তা অনেক গুণ বেশি বিশ্বাসযোগ্য।
বিজেপি অবশ্য বছরে ২ কোটি চাকরি নিয়ে এখন আর উচ্চবাচ্য করে না। বরং চাকরির ব্যাপারটা এখন চলে গিয়েছে পিছনের দিকে। ভোটের মুখে রাজ্যে রাজ্যে গিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার নানা কিসিমের প্রকল্পের শিলান্যাস করে চলেছেন মোদি। তাঁরই কথামতো যার সুফল পাওয়া যাবে একশো বছর পরে। সেখানে বেকারি নিয়ে কোনও উদ্বেগের কথা শোনা যাচ্ছে না। বরং যে হারে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে তাতে উলটে বাড়ছে আশঙ্কা। ক্রমেই কমছে চাকরির সুযোগ। হুম হুম করে বাড়ছে শিক্ষিত বেকারের লাইন।
এই রাজ্যের অবস্থাও কি অন্যরকম? মোটেই নয়। নতুন কাজের সুযোগ বাড়তে থাকলে কি একশো দিনের কাজের জন্য এত গলা ফাটাতে হত? এখানে সরকারি দপ্তরে কি শূন্যপদ নেই? তা পূরণ হবে কবে? সব দায় হাইকোর্টের ওপর চাপিয়ে দিলে চলবে কেন? ক’দিন আগে ব্রিগেডে এতকিছু গর্জনের মধ্যে বেকারির কথা কি শুনতে পেলেন?