- তুহিন শুভ্র মণ্ডল
ভোটের ময়দানে কি এবারও উঠে এল পরিবেশ? নদী? নাকি এটাও যে একটা উন্নতির বিষয়। দায়বদ্ধতার বিষয়। সেটা মনেই রাখেন না রাজনীতিকরা অথবা রাজনৈতিক দল!
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গের পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর যৌথ প্ল্যাটফর্ম সবুজ মঞ্চের আয়োজনে সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে সভা হয়েছিল। উপস্থিত ছিলেন উত্তরবঙ্গ সহ বিভিন্ন জেলার নদী ও পরিবেশকর্মীরা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনি ইস্তাহারে যাতে পরিবেশের কথা গুরুত্ব পায় সেটা সুনিশ্চিত করাই ছিল লক্ষ্য। ক’দিন পর প্রকাশিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনি ইস্তাহারে পরিবেশের কথা অল্পবিস্তর যে ছিল না তা নয়, কিন্তু তা পূরণে দায়বদ্ধতা? কহতব্য নয়।
পাঁচ বছর পরে আবার একটা ভোট। কী অবস্থায় পরিবেশ? তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলি কী ভাবছে? এই ভোটে যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন তাঁরা কি আদৌ বলছেন নদীর কথা? নদী ও প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ পশ্চিমবঙ্গের পরিবেশকে ধর্তব্যের মধ্যেই আনছে না রাজনৈতিক দলগুলো। কী অবস্থা নদীগুলোর? কী বা অবস্থা প্রাকৃতিক সম্পদের? কোনও পার্টিই পরিবেশের কথা বলে না।
দক্ষিণ দিনাজপুরের প্রধান তিনটি নদী আত্রেয়ী, পুনর্ভবা, টাঙন। তিনটি নদীরই জল নিয়ন্ত্রণ করছে বাংলাদেশ। বর্ষার সময় ছাড়া নদী শুকিয়ে কাঠ। শুধুমাত্র আত্রেয়ী নিয়ে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। একবার দু’বার রাজ্য-কেন্দ্র-বাংলাদেশ কথা হয়েছে বা চিঠি চালাচালি হয়েছে। কিন্তু তারপর? যদিও রাজ্য সরকার দাবি করছে বাংলাদেশের জল নিয়ন্ত্রণের পরিপ্রেক্ষিতে আত্রেয়ীর বুকে শহরের মধ্যেই চকভবানীতে তাদের তৈরি চেক ড্যাম নদীর বুকে জল রাখতে সক্ষম হচ্ছে। কিন্তু সে তো একটা দিকে। মূল শহর, মৎস্যজীবীদের পরিবার নদীর যে অংশে আছে সেই খিদিরপুর হালদারপাড়ার কী হাল? জল থাকছে নদীর এই অংশে? কী উত্তর আছে কার কাছে? কেন বাংলাদেশ সরকারের যৌথ আত্রেয়ী খননের চিঠি এসে পড়ে থাকে রাজ্য সরকারি দপ্তরে? কেন জোরালোভাবে আত্রেয়ী ইস্যু তুলে ধরছে না কেন্দ্র? তিস্তা ইস্যুর সমাধান দিতে পারেনি বলে?
পুনর্ভবা, টাঙন ইস্যুতে একবার মুখ্যমন্ত্রী বিবৃতি দিয়েছেন। তারপর? সম্প্রতি নদী হোক ভোটের ইস্যু দাবি তুলে যখন পরিবেশকর্মীরা রাস্তায় নেমে মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ করছেন, তখন সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিচ্ছেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী ও বিজেপি প্রার্থী। একে ইতিবাচক ঘটনা হিসেবেই দেখছি। কিন্তু প্রশ্ন হল, চূর্ণি-মাথাভাঙ্গা নদীর আন্তর্জাতিক সমস্যা, উত্তরের ব্রাহ্মণী, শ্রীমতি, কুলিক, তোর্ষা, চেঙ্গা, হুলিয়া, বুড়ি বালাসন নিয়ে কবে বলা হবে? দক্ষিণবঙ্গের সরস্বতী, গন্ধেশ্বরী নদী পুনরুদ্ধারে পরিকল্পনা কোথায়? শিলিগুড়িতে মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যান, রায়গঞ্জে কুলিক পুনরুজ্জীবন প্রকল্প কোথায় গেল? সুন্দরবনকে বাঁচানোর কথা? কারা বলবে এসব? শুধুমাত্র কয়েকটি পরিবেশ সংস্থা আর পরিবেশকর্মী? কেন জনসাধারণ এ নিয়ে সরব হবে না? কেন জনপ্রতিনিধিরা এসব নিয়ে নীরব? অবাধ ও অবৈধ বালি-পাথর উত্তোলনে নদীর হাল বেহাল। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলির ভূমিকা ভোটের ইস্যু হয় না।
আসলে পরিবেশ তোমার এখনও ভোট নেই। তাই পূর্ব কলকাতার জলাভূমি থেকে সুন্দরবন, দক্ষিণবঙ্গ বা উত্তরবঙ্গের অজস্র নদী বিপন্ন হয়ে থাকে।
(লেখক পরিবেশকর্মী, শিক্ষক। বালুরঘাটের বাসিন্দা)