- আশিস ঘোষ
ভোটের ইস্তাহারের আগে আলাদা একটা ইজ্জত ছিল। কারণ তখন পার্টিগুলোর কথা, তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতির আলাদা দাম ছিল। তাদের ছাপানো ইস্তাহারের প্রতিশ্রুতি মাথায় রেখে ভোটাররা লাইনে দাঁড়াতেন। এখন নিয়ম করে ইস্তাহার বের করা হয় বটে, কিন্তু তা নিয়ে মাথা ঘামান না কেউ।
এবার আবার সেই ইস্তাহারের নতুন নতুন নাম হয়েছে। কারও সংকল্পপত্র, তো কারও ন্যায়পত্র। কারও বা দিদির গ্যারান্টি। যে নামেই ডাকো তা আদতে সেই সাবেক ইস্তাহারই। তবে ব্যাপারটা গুলিয়ে যায় যখন লোকসভার ভোট আসে। যেসব দল সর্বভারতীয় তাদের তবু কথার ওজন থাকে। কারণ তারা জিতে সরকার বানালে সেই প্রতিশ্রুতি রাখার ক্ষমতা তাদের থাকে। অন্তত লোকে তাই বিশ্বাস করে। সেইমতো ভোটাররা পরের ভোটে মিলিয়ে দেখেন ক’টা প্রতিশ্রুতি কাজে লাগানো হয়েছে। সেইমতো কাগজে-টিভিতে বিতর্কের আসর বসে।
কিন্তু মুশকিল হয় ছোট রাজ্যভিত্তিক দলগুলোর। নিজের জোরে দিল্লিতে সরকার গড়ার মুরোদ নেই তাদের। ফলে লোকসভার ভোটে তারা কী বলল তাতে কার কী আসে যায়! যেসব কাজ রাজ্য স্তরে করার কৃতিত্ব রাজ্যের শাসকদলের, সেই কাজের ফিরিস্তি লোকসভার ভোটে কতটা কাজ দেবে? এই ভোটটা যে দিল্লিতে সরকার গড়ার ভোট তা অনেক সময় মনে থাকে না অনেকেরই। ফলে রাজধানী দখল করতে পারে যারা তাদের কথায়, কাজে ফারাক নিয়ে চর্চা হতে পারে।
রাজ্যভিত্তিক দলগুলো তা হলে কী করবে? তারাও ভোটের মুখে কিছু বলবে তো। তৃণমূল কিছুদিন আগেও ছিল ইন্ডিয়া জোটের এক শরিক। এখন তারা ভিন্ন। জোটে থাকলে তারা জোটের কথা বলতে পারত। বিজেপিকে সারা দেশে হারিয়ে তারা জোটের সরকারে থাকলে কী কী করতে পারত তার ফিরিস্তি দিতে পারত। ভোটের আগে নয়, পরে অবস্থা বুঝে জোটে থাকার কথা তারা বলছে বটে তাতে ক’জন হলফ করে বলতে পারে সেসময় অন্য কোনও যুক্তিতে তারা সরে দাঁড়াবে না।
তৃণমূল তাদের ৬টি ভাষার ইস্তাহারে সব ভারতীয়র নিশ্চিত কর্মসংস্থান, সবার বাসস্থান, কৃষকদের ফসলের ন্যূনতম দাম থেকে শুরু করে বিনা পয়সায় গরিবদের ১০টা গ্যাস সিলিন্ডার, সামাজিকভাবে অনগ্রসর ছাত্রদের স্কলারশিপ, ১০ লাখ টাকার স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড দেবে বলে জানিয়েছে। দুয়ারে মাসে ৫ কেজি চাল, গম দেওয়া হবে।
তবে তার আগে জমিদার বিজেপিকে হটাতে হবে। সেইসঙ্গে অবশ্যই আছে সিএএ আর এনআরসি বাতিলের কথাও। সেখানেও মুশকিল, কংগ্রেসের ন্যায়পত্রে সিএএ’র কোনও উল্লেখ নেই। এনিয়ে আপত্তি করলে কংগ্রেসের তরফে পরে এক-দু’বার সেকথা বলা হয়েছে বটে, তাতে তেমন জোর নেই। অথচ এ রাজ্যে এটাই তৃণমূলের প্রচারে বড় জায়গাজুড়ে রয়েছে। জোটের ইস্তাহার কমিটিতে তৃণমূল থাকলেও তারা ওদিক মাড়ায়নি।
এটা রাজ্যের ভোট নয়। রাজ্যের হলে যেভাবে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রীর কথা বলা যেত, কেন্দ্রের ভোটে তা বলা যাবে কি? যদি অন্য শরিকরা আপত্তি করে তবে সেসব হওয়ার নয়। তার উপর বড় কথা হল, ভোটের আগে যেভাবে জোটের থেকে দূরত্ব বাড়িয়েছে তাতে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা পরে অটুট থাকবে তো?