- দীপায়ন বসু
মনে হয় এই তো সেদিন। অথচ দেখতে দেখতে ৩০টা বছর পার করে ফেলল, ‘কভি হাঁ কভি না’। শাহরুখ খানের এই সিনেমা হয়তো অনেকেরই দেখা। বিশেষ করে আজ যাঁরা মাঝবয়সি, তাঁদের। আহামরি হিট সিনেমা নয়, অথচ ভীষণভাবে আজও প্রাসঙ্গিক। গল্পের নায়ক সুনীল তাঁর এক বান্ধবী আনাকে ভালোবাসেন। সেই বান্ধবী আবার আরেক বন্ধু ক্রিসের প্রেমে পাগল। সুনীল সবই জানেন, কিন্তু তিনি আনার প্রেমে পুরোপুরি পাগল।
কী করা যায়, কী করা যায় ভেবে মিথ্যার আশ্রয়। ফলস্বরূপ, আনা আর ক্রিসের মধ্যে ঝামেলা। সুনীলের সঙ্গে আনার রসায়ন গাঢ়। কিন্তু কথায় বলে না, খারাপ কাজের ফল শেষটায় খারাপই নয়। এক্ষেত্রেও হল। তবে শেষ পর্যন্ত সমস্ত ভুল বোঝাবুঝির অবসান। আবার আনা আর ক্রিসের রসায়ন জমজমাট। শেষটায় সুনীল কি তাহলে দেবদাস? উহুঁ, তার জীবনে আরেক বান্ধবী হাজির। সুনীল আবার নতুন রসায়নের খোঁজে। সাদামাঠা গল্প। তবে উদ্দেশ্যটা বিশাল। জীবনে না থেমে থাকার বার্তাবাহী।
এই সিনেমার প্রাণভোমরা মনে হয় খুব বেশি করে এর নামে লুকিয়ে। জীবন কখনও ইতিবাচক বার্তা দেবে, কখনও বা উলটোটা। তাই আমাদের এর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া উচিত। আমাদের বেশিরভাগ সেই চেষ্টাটা করি নিরন্তর। লোকসভা ভোট সামনে। রাজনৈতিক দলগুলিও এই চেষ্টা করছে। এই যেমন, সিপিএমের কথা ধরা যাক না কেন। দলের ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে খবর পড়তে তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় (এআই) তৈরি সঞ্চালিকার সাহায্য নিয়েছে।
দোলের দিন সমতা নামের সেই সঞ্চালিকা ২৭ সেকেন্ডের এক ভিডিওতে ঝরঝরে ইংরেজিতে সবাইকে উৎসবের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি অনেক কিছু বলেছে। তাতে বেশিরভাগই থ! বিরোধীরা বিঁধতে ছাড়েনি। যাদের বিরোধিতায় রাজ্যে কম্পিউটার শিক্ষা পিছিয়ে গিয়েছিল, এখন সেই সিপিএম-ই এআই–এর শরণাপন্ন বলে বিরোধীদের অভিযোগ। ঠিক যেন উলটেপালটে, ‘কভি না, কভি হাঁ’। আবার উলটোটাও হয়েছে। মানে, ‘কভি হাঁ, কভি না’।
ইন্ডিয়া জোটের কথাই ধরা যাক। বিজেপিকে উলটেপালটে দিতে অনেকগুলি দল কোমর বাঁধল। সবার ‘হ্যাঁ’-তে হ্যাঁ মিলল। একসঙ্গে জমাটি লড়াই হবে বলে স্বপ্ন দেখাল। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতে ছন্দপতন। না–এর ছড়াছড়ি। গোটা উদ্দেশ্যটাই চৌপট। সেইসঙ্গে এবারের ভোটের ভবিষ্যৎও। রাজ্যে কী হবে, তা নিয়ে হয়তো কারও কৌতূহল থাকতে পারে, কিন্তু দেশের হাল কারা ধরবে, তা নিয়ে কারও মনে সন্দেহের অবকাশ নেই।
দেখেশুনে অনেকেরই আক্ষেপ, জোটের মধ্যে যদি ‘কভি হাঁ, কভি না’ মনোভাব সৃষ্টি হত, তবে হয়তো লড়াইটা এভাবে একপেশে হয়ে যাওয়ার সুযোগ পেত না। তবুও শেষ চেষ্টা চলছে। শেষপর্যন্ত জোটের জট কাটাতে শরিকরা মরিয়া। রাজনীতির অঙ্গন থেকে এবার সাধারণ জীবনে নজর রাখা যাক। আলিপুরদুয়ারের সেই কাঠমিস্ত্রি পরিবারের কথা ধরা যাক। দুর্ঘটনায় মারাত্মক জখম নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন ছেলেকে বাঁচাতে নিজেদের ঘটিবাটি পর্যন্ত বিক্রি করে দিয়েছে পরিবারটি।
জীবন কখনও ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছিল, কখনও নেতিবাচক। মারাত্মক ভেঙে পড়া সেই বাবা–মা কিন্তু হাল ছাড়েননি। এখনও লড়ে যাচ্ছেন। ইংল্যান্ডের রাজপরিবারের বড় পুত্রবধূ কেট মিডলটন ক্যানসারে আক্রান্ত। অর্থ আর প্রতিপত্তিতে দারুণ জীবন। তবে জীবনের কখনও হ্যাঁ, কখনও না পর্ব তাঁকেও রেয়াত করেনি। কিন্তু হাল না ছেড়ে কেটও লড়ে চলেছেন। সবাইকে লড়ার বার্তা জোগাচ্ছেন।
আসলে জীবনে কখনও ‘কভি হাঁ, কভি না’ পর্ব বোধহয় আমাদের কারওই এড়ানোর জো নেই। নইলে কর্ণাটকে ভালো সরকারি চাকুরে এক ইঞ্জিনিয়ারের স্ত্রীকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হয়? তাঁর জীবনের খারাপ পর্ব বলতে, অনলাইন বেটিংয়ের পাল্লায় পড়ে স্বামীর প্রায় দেড় কোটি টাকা দেনা হয়ে গিয়েছিল। পাওনাদারদের হরদম পিছনে পড়া থাকা, খোঁটা দেওয়া। জীবন অবধারিতভাবে কখনো-কখনো আমাদের ‘কভি না’ বলবেই। তবে এটা ধরে নিয়ে উত্তরণের স্বপ্ন দেখাটা প্রয়োজন।
যদিও সেটা বলা যত সহজ, করে দেখানো ততটাই কঠিন। এটা জানা আছে বলেই রাস্তা দেখানোটা বাড়ছে। নিঃস্বার্থভাবে অনেকে রোগমুক্তির উপায় দেখাচ্ছেন। ইন্টারনেট ঘাঁটলে এমন অনেক উপায় বেরিয়ে আসে। বা সংবাদমাধ্যম নিরন্তর অনুপ্রেরণা জোগায়। দুর্ঘটনায় পা খোয়ানো এক তরুণ সবাইকে এক টাকার চা খাইয়ে জীবন বদলাচ্ছেন বা কোনও রাজনৈতিক নেতা মাছ বিক্রি করতে করতে সবার সমস্যা মেটাচ্ছেন বা সিনেমার পর্দায় বিধু বিনোদ চোপড়ার ‘টুয়েলফথ ফেল’, লাইন দিয়ে সমস্ত অনুপ্রেরণা হাজির হচ্ছে।
সাধে কী আর পাঠান, জওয়ান–এর মতো ধুমধাড়াক্কা অ্যাকশন সিনেমা করা শাহরুখ বলেন, ‘কভি হাঁ কভি না’র সুনীলই আমার করা সেরা চরিত্র!’