- মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস
রাজনৈতিক দলগুলো ব্যারিকেড ভাঙছে রাজনীতির স্বার্থেই। সন্দেশখালির মতো আরও বহু গ্রামে বিভিন্ন জায়গায় তারা ঝাঁপিয়ে পড়ছে ‘কার আগে প্রাণ, কে করিবে দান…’ এই ভঙ্গিতে। সত্যিকার অন্তর্ব্যথা কেমন অস্তসূর্যের রঙে সাজে। অদ্ভুত লাগে সব… একদিকে ভয়, শঙ্কায় মুখ ঢাকা তাঁদের। একের পর এক অভিযোগ জানিয়ে চলছেন তীব্র ভাষায় স্পষ্ট। অন্যদিকে পাশেই কোনও এক স্বেচ্ছাসেবক দলের খাদ্য বিতরণের মুখোমুখি কত হাজার প্যালেস্তিনীয় শিশু হাতে পাত্র নিয়ে ব্যারিকেড বাঁধা বাঁশের আড়াল থেকে বাড়িয়ে দিয়েছে হাত। কেউ ভালো নেই পৃথিবীর কোনও প্রান্তে। খাদ্য সংগ্রহে একেবারে কোণের দিকে দাঁড়ানো খুদে শিশুটির মুখ কত চেনা যেন!
ফেব্রুয়ারির হলদে রং আর ফুলে যে পারিজাত বনের নেশা, কিশোর-কিশোরী থেকে যৌবন ছড়িয়ে দিচ্ছে সৌরভ, প্রেম আর পুজো… ঠিক একইসময়ে হাতের পাত্র আর উৎকণ্ঠিত মুখগুলো এলোমেলো করে দেয় সব। মনের ভিতর পর্দা পড়ে। বড় অসহায় মনে হয় নিজেদের। একটাই জীবন, শুধুই কষ্ট পাওয়া! ভিতরে যন্ত্রণার নির্যাস নিমেষে প্রতিবাদ হতে পারে। পৃথিবীর এ কোণ সে কোণ যতই ধৈবত গান্ধার পঞ্চম কোকিলের সুরে মিশুক, শিশুর ক্ষুধার যন্ত্রণা বড় বেদনার। কষ্ট গুড়গুড় করে পেট থেকে বুকে। শিশুর বাসযোগ্য করে যাওয়ার অঙ্গিকার তলিয়ে যায়।
তিন-সাড়ে তিন বছরের বাচ্চাটির মুখ কখন আমার সন্তানের মুখ হয়ে যায়। বলতেই পারেন অনেকে এ ভাবনা ক্লিশে, কিন্তু ওই অসহায় সন্দেশখালির গাড়ির সামনে শুয়ে পড়া মায়ের প্রতিবাদে কখন আমি দাঁড়িয়ে আছি মনে হয়। আমার সন্তান হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষা দিতে যেতে পারছে না!! কী ভয়াবহ, তলিয়ে ভাবা নেই, যাচাই করা নেই প্রকৃত অপরাধী কে! মহিলা পুরুষ বলে নয়, মানুষ সদলবলে সোচ্চার, এ তো মিথ্যে নয়! এতজন না খেতে পাওয়া কষ্ট করে বেঁচে থাকা মায়েদের আমরা বিচার করব কী! বুকের ভিতরের কষ্টের দলাটি এখন গলার কাছে আটকে। কোনও বলিষ্ঠ স্বর নির্দ্বিধায় বলে দিচ্ছে ‘সব সাজানো’, ‘সব নাটক’।
কেমন শিউরে উঠি। এত মানুষ যে দুজন বা তিন-চারজনের নাম করে দুর্বিনীত চিনিয়ে দিচ্ছে বারবার, তাদের বিরুদ্ধে সে সব কণ্ঠ গর্জে উঠছে না তো! একবারও বলছে না ওদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চয়ই হবে। তা না করে কতগুলো নিরপরাধ হঠাৎ পরিস্থিতিতে ফুঁসে ওঠা কিংবা শুধুমাত্র দাঁড়িয়ে থাকা ভিড় জনতার মধ্যে থেকে তুলে নিয়ে ভ্যানে উঠিয়ে চলে যাওয়া, পরিস্থিতি আরও জটিল বিশৃঙ্খল ভয়াবহ করে তুলেছে। এর দায় কার! দুরন্ত কালো মেঘের ছায়া সর্বত্র।
সব সমস্যার মধ্যে রাজনীতি না খুঁজে সেই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সময় এসেছে। অদ্ভুত চক্রান্ত ষড়যন্ত্রে উন্মুক্ত পৃথিবীর উদার পরিবেশ আবদ্ধ যন্ত্রণাময় গিলোটিনে পরিণত।
বাতাসে বসন্তের রং হলুদ নয় আর। স্তরে স্তরে ঘৃণা, ভয়, ষড়যন্ত্র। অসহায় দারিদ্র্য নিপীড়িত মানুষ ভালো থাকবে কবে! সামান্য ফসলের আলোয় মুখগুলো উজ্জ্বল হয়ে উঠুক, ফিরে পাক হারানো জমি, অযথা তুলে নেওয়া সন্তানেরা ফিরুক মার কাছে।
(লেখক শিক্ষক। জলপাইগুড়ির বাসিন্দা)