অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায় : অদৃশ্য যুদ্ধটা এখনও চলছে!
ভারতীয় ক্রিকেটের অন্দরমহলের খবর, আগামী কয়েকদিন চলবেও এই লড়াইটা। পরে সময়ে সঙ্গে ক্রমশ স্তিমিত হয়ে যাবে বোর্ড বনাম ক্যাপ্টেনের লড়াই। থেকে যাবে ব্যক্তিগত কিছু ঘাত-প্রতিঘাত।
বিরাট কোহলির টেস্ট নেতৃত্ব ছাড়ার পর অনেকটা সময় কেটে গিয়েছে। ভারতীয় ক্রিকেটে কোহলিকে নিয়ে আবেগ ও শ্রদ্ধা যেমন দেখা গিয়েছে, তেমনই তাঁর উত্তরসূরি নিয়ে চর্চা চলছে ভালরকম। আর তার মধ্যেই রয়েছে, দেখ কেমন লাগের অনুভূতিও! যার মধ্যে লুকিয়ে চাপ দিয়ে কোহলিকে নেতৃত্ব ছাড়ার তৃপ্তিও।
যার সবচেয়ে বড় দুটো উদাহরণ হল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ও রোহিত শর্মার সোশ্যাল দুনিয়ার পোস্ট। যার মধ্যে শ্রদ্ধা রয়েছে ঠিকই। কিন্তু সেটা তো লোক দেখানো। তাছাড়া শনিবার সন্ধ্যায় ৬.৪৪ মিনিটে কোহলির বিরাট সিদ্ধান্ত ঘোষণার দীর্ঘসময় পর মধ্যরাতে বোর্ড সভাপতির টুইট, আর আগামীর নেতা রোহিতের আরও পরের ইনস্টাগ্রাম পোস্ট নিশ্চিতভাবেই তাৎপর্যপূর্ণ। নির্বাচক কমিটির প্রধান চেতন শর্মার ফেসবুক পোস্টও তো রবিবার বেলার দিকেই করা।
প্রশ্ন হল, বিরাট-ইস্যুতে গত সন্ধ্যা থেকেই দুনিয়া তোলপাড় হল। সেই খবরের প্রতিক্রিয়া দিতে কেন সৌরভ-রোহিত-চেতনদের এত সময় লেগে গেল, সেটাই রহস্য। সচিব জয় শা তো দ্রুতই তাঁর প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন সোশ্যাল দুনিয়ায়। ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের অন্দরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বোর্ড সভাপতি গতকাল শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন। রোহিত নিজেকে ফিট করে তোলার কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। আর নির্বাচক প্রধানের দেরির কারণ অস্পষ্ট।
তবে সূত্রের খবর, চেতন বোর্ডের শীর্ষ কর্তাদের অনুমতি নিয়ে তবেই ‘বিরাট শ্রদ্ধাজ্ঞাপন’ করেছেন। আরও চমকপ্রদ হল, আজ সকালে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের তরফে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো ইমেল। বিসিসিআই যেখানে কোহলির সিদ্ধান্ত ঘোষণার দশ মিনিটের মধ্যে টুইট করতে পারল, সেখানে ইমেল পাঠাতে রাত কাবার! আর তিন দিন পরেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজ শুরু টিম ইন্ডিয়ার। কোহলির সিদ্ধান্ত ভারতীয় দলের আগামীর পারফরমেন্সে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, তা নিয়ে ভালরকম জল্পনা রয়েছে।
কিন্তু তার আগে সোশ্যাল দুনিয়ায় মধ্যরাতে সৌরভের প্রতিক্রিয়া নিয়ে শুরু হয়েছে সম্পর্কের নানা সমীকরণ। সৌরভ লিখেছেন, ‘বিরাটের নেতৃত্বে ভারত সব ধরনের ক্রিকেটে দ্রুত উন্নতি করেছে। সিদ্ধান্তটা ওর ব্যক্তিগত। বোর্ড এই সিদ্ধান্তকে সম্মান করে। ভবিষ্যতে এই দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে ও। ওয়েল ডান।’ মহারাজের শেষ লাইনটা নিয়ে সোশ্যাল দুনিয়ায় তোলপাড় চলছে। যার মধ্যে রয়েছে স্পষ্ট ইঙ্গিত, ‘ইয়ে তো হোনা হি থা!’
হিটম্যানের মন্তব্যকে ঘিরেও জল্পনা কম নেই। আজ তিনি ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, ‘বিস্মিত। ভারত অধিনায়ক হিসেবে সাফল্যের জন্য অভিনন্দন।’ তাঁদের সম্পর্কের রসায়ন ভারতীয় ক্রিকেটে কারোর অজানা নয়। যদিও দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে রওনা হওয়ার আগে তাঁর সেই বিস্ফোরক সাংবাদিক সম্মেলনে কোহলি বলেছিলেন, রোহিতের সঙ্গে আমার কোনও সমস্যা নেই। গত দুই বছরে এই কথা বারবার বলে আমি ক্লান্ত।
প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক বললেই সেকথা দুনিয়ার সবাই মেনে নেবেন, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। তাছাড়া শেষ কয়েক মাসে বিরাটকে যেভাবে চাপে রেখে ক্রমশ ডিপ ফাইন লেগের বাইরে পাঠানোর দিকে এগিয়ে গিয়েছে বিসিসিআই, তারপর কোহলির পেশাদারি মন্তব্যের মধ্যে দিয়ে বাস্তবকে খুঁজতে যাওয়া বোকামি।
বোর্ড বনাম কোহলির যুদ্ধের শেষ অঙ্ক কী হতে পারে? ভারতীয় ক্রিকেটের অন্দরমহল থেকে আজ এমন প্রশ্নের কথাও শোনা গিয়েছে। পারফরমেন্স খারাপ হলে বিরাট কি প্রথম একাদশ থেকেও ছিটকে যেতে পারেন? এখনই এই প্রশ্নের জবাব দেওয়ার সময় আসেনি। কিন্তু শেষ পরিণতি হিসেবে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এমন কিছু ঘটলে অবাক হওয়ার থাকবে না।
রোহিত-রাহুল দ্রাবিড় যুগলবন্দির মাধ্যমে ভারতীয় ক্রিকেটে আরও চমক আসবে, এটা এখনই নিশ্চিতভাবেই বলে দেওয়া যায়।
(লেখক উত্তরবঙ্গ সংবাদের সিনিয়র স্পোর্টস জার্নালিস্ট)